ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন: একটি সম্পূর্ণ গাইড
5/3/20251 min read
আয়কর রিটার্ন কি?
আয়কর রিটার্ন হলো একটি সংবিধিবদ্ধ নথি যা করদাতাদের দ্বারা তাদের বার্ষিক আয় এবং সেই অনুযায়ী করের দায়িত্বের তথ্য উপস্থাপন করে। এটি সাধারণত দেশের কর কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত করা হয় এবং উক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অর্থনৈতিক পর্যালোচনা হিসেবে কাজ করে। আয়কর রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে একজন করদাতা তার করের দায়িত্ব, করের প্রস্তুতি এবং পরবর্তীতে কর ঋণ ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়ায় সহায়তা পায়।
আয়কর রিটার্ন দাখিল করার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রথমত, এটি করদাতাদের জন্য নিজেদের আয় এবং খরচ সম্পর্কে পুর্ণাঙ্গ এবং সঠিক তথ্য প্রদান করে। কর কর্তৃপক্ষ এই নথিটির মাধ্যমে তাদের উপরী আয়কর নির্ধারণ করে এবং কর ফাঁকির প্রতিকার হিসেবে এটি একটি কার্যকর উপায়। দ্বিতীয়ত, আয়কর রিটার্ন দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক পরিকল্পনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংক Loan বা বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে যেমন শিক্ষিকা ঋণ, বাড়ি ক্রয় ঋণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন প্রদর্শন করা প্রয়োজন হয়।
আয়কর রিটার্নটি কিভাবে কাজ করে, তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করদাতারা তাদের বার্ষিক আয় নির্ধারণ করে, সমস্ত জনগণের কাছে উপলব্দি সকল করের ব্যাখ্যা করেন এবং পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী তাদের নিয়মানুযায়ী কর প্রদান করেন। কর ফাঁকি থেকে রক্ষা পেতে এবং সরকারী খাতের ন্যায় প্রয়োগে আয়কর রিটার্ন দাখিল একটি অসাধারণ কার্যকরী শর্ত। এই কারণে, করদাতাদের জন্য এটি একটি অপরিহার্য অংশ এবং দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে এটি অঙ্গীভূত।
কারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন?
আয়কর রিটার্ন দাখিল করার বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা সরকারের নীতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। সাধারণভাবে, যে সকল ব্যক্তিদের বা প্রতিষ্ঠানগুলির করযোগ্য আয় রয়েছে, তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা আবশ্যক। করযোগ্য আয় বলতে বোঝায় সেই আয় যা কর কানুনের অধীনে করদাতার খরচ ও কেমন সেবা গ্রহণের প্রভাব ছাড়াই নির্ধারণ করা হয়।
প্রথমে, যেসব স্বতন্ত্র ব্যক্তি বা সংস্থা নিয়মিতভাবে ব্যবসা বা পেশার মাধ্যমে আয় অর্জন করে, তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যবসায়ী, ফ্রিল্যান্সার, ডাক্তার, আইনজীবী এবং শিক্ষকসহ অন্যান্য পেশার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এই ক্ষেত্রে, ব্যবসা বা পেশার মাধ্যমে অর্জিত আয় যদি নির্ধারিত সীমার উপরে হয়, তবে তা করযোগ্য হবে।
বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেমন যদি আয়করযোগ্য আয় একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে অথবা কোন উল্লেখযোগ্য সম্পদ থাকে, তাহলে করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে প্রধান দৃষ্টিভঙ্গি হলো করদাতার প্রকৃতি এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থান। এছাড়াও, বিভিন্ন বিভাগ যেমন সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক হিসাব এবং বিনিয়োগের উপর অর্জিত আয়ও প্রতিষ্ঠানের করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য হয়। ফলে, কৃত্রিম ব্যক্তিদেরও, যেমন কোম্পানি, সংস্থা অথবা অন্যান্য এলএলপির মতো একটি আধিকারিক আকারে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
আয়কর রিটার্ন দাখিল না করিলে কি হয়?
আয়কর রিটার্ন দাখিল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া যা প্রত্যেক নাগরিকের জন্য আবশ্যক। যদি কোনো ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন দাখিল না করে, তবে তাকে বেশ কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে হতে পারে। প্রথমত, আয়কর না দাখিল করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচী এবং সুবিধা যেমন স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা সহায়তা এবং অন্যান্য সরকারি প্রোগ্রামে সুবিধা পেতে সমস্যা হতে পারে।
এছাড়াও, আয়কর রিটার্ন দাখিল না করার কারণে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে অসুবিধা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ নেয়ার জন্য আয়কর রিটার্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। যদি এই রিটার্ন না করা হয়, তবে এই সংযোগগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও আয়কর রিটার্ন দাখিলের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আয়কর রিটার্ন যাচাই করতে চায়। ফলে, যদি কেউ রিটার্ন দাখিল না করে, তাহলে বিষয়টি চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, বেতন ভাতা প্রদান에도 সমস্যা হতে পারে। অনেক সংস্থা কর্মীদের আয়কর পরিস্থিতি যাচাই করে তাদের বেতন প্রদান করে, ফলে আয়কর রিকার্ড না থাকার কারণে বেতন পেতে বিলম্ব বা বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
আয়কর রিটার্ন জমা করার জন্য শেষ তারিখ
“প্রতিটি করদাতাকে সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষের শেষে পরবর্তী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।”
শেষ তারিখ: ৩০ সেপ্টেম্বর (পরবর্তী করবর্ষ)
উদাহরণ: ২০২৪–২৫ করবর্ষের জন্য রিটার্ন জমার শেষ তারিখ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
NBR চাইলে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই সময়সীমা বাড়াতে পারে (সাধারণত ১ মাস পর্যন্ত, যেমন ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত)।
যদি করদাতারা শেষ তারিখের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হন, তাদের জন্য কিছু বিকল্প পদক্ষেপ রয়েছে। প্রথমত, তারা একটি প্রস্তাবিত সময়সীমার জন্য আবেদন করতে পারেন, যা চলমান যোগ্যতার মধ্যে হতে পারে। দ্বিতীয়ত, জরিমানার ঝুঁকি থেকে বাঁচতে অবিলম্বে একটি পূর্ণাঙ্গ আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া উচিত। এমনকি চলতি বছর যদি সকলের মধ্যে প্রভাবশালী পরিস্থিতি থাকে, করদাতারা তাদের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণ কর্মপ্রণালী অবলম্বন করতে যাচ্ছেন, তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।